Sunday, June 26, 2011

খেলা হয় ফেসবুকে

পাঁচ-দশ টাকা জোগাড় হলেই দৌড় ভিডিও গেমসের দোকানে। মুস্তফা খেলেই কাটিয়ে দেয় সারা দিন। কিংবা বন্ধুর নতুন গেম-সিডি পাওয়ার জন্য তার হাতপায়ে ধরা। জন্মদিনে একটা গেমসের সিডি পাওয়া মানেই অর্ধেক রাজত্ব হাতে পেয়ে যাওয়া। সেই দিন বদলে গেছে। এখন খেলা নয় মাঠেঘাটে, খেলা হয় ফেসবুকে।
ফার্মভিলের মাঠে ফসল বুনতে গিয়ে দেখা পেতে পারেন আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের। কিংবা আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাই হয়তো বলে বসবেন, তুমি আমার নেইবার রিকোয়েস্ট নিচ্ছ না যে!
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সাখাওয়াত আলমের সারা রাত যেমন কাটে পোকার খেলে। ‘আগে ফার্মভিল খেলতাম। খুব দ্রুত লেভেল পেরিয়ে যেতাম। এখন আর তেমন মজা পাচ্ছি না। ইদানীং পোকার আর মাফিয়া ওয়ারসে আছি। ফার্মটা আছে আগের মতোই। যেকোনো দিন আবার হয়তো শুরু করে দেব।’ বললেন তিনি। কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন খেলছেন ফেসবুকের অসংখ্য গেম।এখনো যাঁরা শুরু করেননি ফেসবুকে গেম খেলা, তাঁদের জন্যই এই প্রতিবেদন।



ভার্চুয়াল চাষবাস
প্রায়ই হয়তো নোটিফিকেশন পাচ্ছেন, আপনার কোনো বন্ধুর জমিতে পাওয়া গেছে মিষ্টি এক ভেড়ার ছানা। আপনি কি তাকে আশ্রয় দিতে চান? আপনার বন্ধু নির্মাণ করছেন বাগান। প্রয়োজনীয় পেরেক, কাঠ ইত্যাদি পাঠাতে হবে তাঁকে। এত দিন তো ‘ইগনোর’ করে এসেছেন। এখন শুরু করেই দেখুন না। ভার্চুয়াল জগতে থাকুক না নিজের এক টুকরো জমি—যেখানে চাষবাস করবেন, মুরগির ছানা ফোটাবেন, একটু একটু করে গড়ে তুলবেন গোয়াল বা বাগান। পোষা কুকুরটাকে শেখাবেন নতুন নতুন খেলা। বন্ধুদের উপহার দেবেন খড়ের গাদা, গরু বা নানা গাছ। এর ফাঁকে আবার লেডি গাগার নতুন অ্যালবামের গান শোনারও সুযোগ থাকছে। কয়েক দিন আগে লেডি গাগা ফার্মভিলে মুক্তি দিলেন তাঁর নতুন অ্যালবাম বর্ন দিস ওয়ে। জিঙ্গার এই গেমটি খেলতে শুরু করবেন আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি ও কয়েন দিয়ে। খেলতে খেলতে বাড়বে এসবের পরিমাণ। আয় হবে জমির ফসল, গাছের ফল, পোষা প্রাণী থেকে। এ ছাড়া বন্ধুদের সাহায্য করেও পাবেন কয়েন। লেভেল পার হলে পাবেন ক্যাশ। লেভেল ২০ পার হওয়ার পর সুযোগ পাবেন ইংলিশ কান্ট্রিসাইডে নতুন আরও একটি ফার্ম তৈরির। সেখানকার সাজসজ্জা আবার একদমই ভিন্ন। এ ছাড়া প্রায়ই জিঙ্গা ছাড়ে দারুণ সব স্পেশাল আইটেম। ২৩ জুন ফার্মভিলের দ্বিতীয় জন্মদিন উপলক্ষে এখন যেমন পাওয়া যাচ্ছে বার্থডে হ্যাট, পার্টি টেবিল, বার্থডে কেক ইত্যাদি।

শহরটাই আমার
আস্ত এক শহরের অভিভাবক আপনি। প্রয়োজনমতো ইমারত বানান, ভাড়ার টাকা তুলে উন্নয়নের কাজে লাগান, ব্যবসার নতুন ক্ষেত্র তৈরি করুন। বানান হাসপাতাল, লাইব্রেরি, রেস্তোরাঁ, শপিং মল, চিড়িয়াখানা। এ সবই আপনার আয়ের উৎস। এর ফাঁকে বন্ধুরদেরও সাহায্য করুন। তাদের শহরে গিয়ে নানা কাজ করে দিতে পারেন। জিঙ্গা সিটিভিল নামের এই গেমটি ছাড়ার প্রথম দিনেই এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ।

প্রথম পদচিহ্ন
লোকালয়ের সীমানা পেরিয়ে বহু দূরে চলে যান। সেখানে আপনিই প্রথম মানুষ। ঝোপঝাড় সাফ করে, বুনো জন্তু সামাল দিয়ে গড়ে তুলতে হবে বাসস্থান। কুড়ালের ঘায়ে নামিয়ে ফেলতে হবে বড় বড় গাছ। উৎপাত করবে ভালুক, সাপখোপ। তাদেরও শায়েস্তা করতে হবে। জমি তৈরি করে ফসল বুনুন, লাগান ফল-ফুলের গাছ। পোষ মানান গরু, ভেড়া, হাঁস, মুরগি। এসব থেকেই আয় হবে। জিঙ্গা এই গেমটিতে দিয়েছে মজার এক ফিচার। আপনার মনের মতো জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারবেন। দুজনে মিলেই বানাবেন স্বপ্নের আবাস। তবে গেম কার্ড না কিনে অর্থাৎ টাকা খরচ না করে খেললে গেমটিতে এগোনো বেশ কঠিন। প্রতিটি কাজ করতেই প্রয়োজন হবে নির্দিষ্ট এনার্জি। সেটা আবার বেশ দ্রুতই ফুরিয়ে যায়। এ কারণে জিঙ্গা বেশ সমালোচিতও হয়েছে। ফার্মভিল আর সিটিভিলের মতো জনপ্রিয়তাও পায়নি গেমটি। তবে ধৈর্য ধরে খেললে ফ্রন্টিয়ারভিলও দারুণ উপভোগ্য।

আমিই গডফাদার
গডফাদার ছবিটার কথা মনে আছে? খেলতে খেলতে নিজেকে মনে হতে পারে ডন ভিটো কর্লিয়নি। গড়ে তুলুন অপরাধ-সাম্রাজ্য। যেখানকার আপনিই রাজা। নিজের মাফিয়া দল নিয়ে লড়াই করতে হবে অন্য মাফিয়া পরিবারগুলোর সঙ্গে। লুটে নিতে হবে সম্পদ। এভাবেই বেড়ে উঠবে আপনার দল, সম্পদ। গেমটা চলবে নিউইয়র্ক শহরে। পরে লাস ভেগাস, ইতালি, কিউবা, মস্কো, ব্যাংকক, আটলান্টিক সিটিতেও বিস্তার করতে হবে সাম্রাজ্য। মাফিয়া ওয়ারস নামের এ গেমে গত মার্চে যোগ করা হয়েছে নতুন লোকেশন ব্রাজিল।

পোকার খেলুন ফেসবুকে
পোকার খেলতে পারবেন ফেসবুক-বন্ধুদের সঙ্গে। চাইলে খেলতে পারেন অপরিচিত খেলোয়াড়দের সঙ্গেও। এর মধ্যেই হয়তো হয়ে যাবে বন্ধুত্ব। গেম জিতলে পাবেন চিপস। সেটা বিক্রি করতে পারবেন অন্য খেলোয়াড়দের কাছে। এভাবেই আয় হবে টেক্সাস হোল্ড দেম পোকার।

অনলাইনে রাঁধাবাড়া
সঞ্জীব কাপুর বা টমি মিয়ার কায়দায় আপনিও বনে যেতে পারবেন শেফ। ক্যাফে ওয়ার্ল্ড গেমে রান্নাবান্না করে পরিবেশন করুন, সাজিয়ে তুলুন নিজের রেস্তোরাঁ। চেয়ার, টেবিল, দেয়ালের রং—সবই নিজের মনের মতো করে বাছাই করতে পারবেন।

সঙ্গীসাথি পশুপাখি
বাড়িতে জায়গা নেই, মিষ্টি একটা কুকুর বা বিড়ালছানা রাখার শখ তাই পূরণ হচ্ছে না। কোনো চিন্তা নেই। ফেসবুকে গিয়ে শুরু করে দিন পেট সোসাইটি খেলা। বেছে নিন পছন্দের পোষা প্রাণীটি। তার গায়ের রং, নাক, মুখ, চোখ কেমন হবে তা-ও আপনি বেছে নিতে পারবেন। তার রোজকার যত্নটাও আপনাকেই নিতে হবে। গোসল করানো, দাঁত মেজে দেওয়া, খাওয়ানো—সবই করবেন। বন্ধুদের পোষা প্রাণীর সঙ্গে রেস লড়ে আয় করার সুযোগও আছে। প্লেফিশের তৈরি এই গেমটি জিঙ্গা গেমগুলোর পাশাপাশি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে।

গুপ্তধনের খোঁজে
নিঝুম এক দ্বীপে আপনি একা। এখানেই গড়ে তুলুন মনের মতো আবাস। থাকতে হবে নিজের বানানো কুটিরে, চলাফেরার জন্য নৌকাই ভরসা। এবার বেরিয়ে পড়ুন অভিযানে। হাতে থাকবে মানচিত্র। চষে বেড়ান আশপাশের দ্বীপগুলো। পেয়ে যাবেন নানা গুপ্তধন। তা থেকে আয় হবে। সেই টাকা দিয়ে সাজিয়ে তুলতে পারবেন আপনার আবাস। ট্রেজার আইল গেমটা এমনই।

এই গেমগুলো ফেসবুকের জনপ্রিয় গেমগুলোর মধ্যে পড়ে। এ ছাড়া আপনার পছন্দমতো আরও অসংখ্য গেম পাবেন। নতুন নতুন পোশাক কেনা, ফ্যাশন শোতে অংশগ্রহণ নিয়ে খেলতে পারেন ইট গার্ল, মল ওয়ার্ল্ড ইত্যাদি গেম। নিজের মনের মতো করে অ্যাকুরিয়াম সাজিয়ে খেলতে পারেন হ্যাপি অ্যাকুরিয়াম। দ্বীপের মধ্যে দারুণ এক রিসোর্ট গড়ে তুলতে পারেন রিসোর্ট ওয়ার্ল্ড গেমে।

ফেসবুকের সেরা ২৫ গেম, মে ২০১১
প্রতি মাসে ব্যবহারকারীর হিসাবে
ক্রম গেম নির্মাতা মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী
১ সিটিভিল জিঙ্গা ৮,৮৭,৭৭,১৩২ জন
২ ফার্মভিল জিঙ্গা ৪,৬৯,২১,৬৩৮ জন
৩ টেক্সাস হোল্ড দেম জিঙ্গা ৩,৬১,৮৬,৩১৬ জন
৪ ফ্রন্টিয়ারভিল জিঙ্গা ১,৫২,১৬,৫৩৪ জন
৫ ক্যাফে ওয়ার্ল্ড জিঙ্গা ১,২৯,২০,৬৬৩ জন
৬ মাফিয়া ওয়ারস জিঙ্গা ১,১৮,৮২,৬৮৫ জন
৭ মনস্টার গ্যালাক্সি গালা অনলাইন ১,১৪,৪৭,১২০ জন
৮ বিজুয়েলড ব্লিটজ পপক্যাপ গেমস ১,১১,২১,৮২১ জন
৯ র‌্যাভেনউড ফেয়ার লল অ্যাপস ৯৯,৩৮,৪৬৯ জন
১০ পেট সোসাইটি প্লেফিশ ৯৫,২৬,২৩৮ জন
সূত্র: ইনসাইড সোশ্যাল গেমস ২০১১। উপাত্ত: অ্যাপডেটা ডট কম

No comments:

Post a Comment